Showing posts with label ইসলাম. Show all posts
Showing posts with label ইসলাম. Show all posts

ঈদ-উল-আযহা এবং আমাদের করনীয়

ঈদ-উল-আযহা এবং আমাদের করনীয়

বছর ঘুরে আবার এলো আত্মত্যাগের মহিমাময় ঈদ-উল-আযহা। হাজার বছর পূর্বে মরুময় তেপান্তরে মহান আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক একেরপর এক অগ্নি পরীক্ষা যখন নবী হযরত ইব্রাহিম (আঃ) সুদৃঢ়তার সাথে
মোকাবিলা করে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই নাযিল হয় এমনই এক ওহী যার ফলে তাকে নিতে হয় তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত। নির্দেশ আসে তিনি যেন বিসর্জন দেন তাঁর জীবনের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু। অঝোর নয়নে কাঁদতে কাঁদতে বায়োবৃদ্ধ নবী তৈরি হন তাঁর সবচেয়ে প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি দেবার জন্য। মনের সব কষ্ট চেপে তিনি যখন প্রস্তুত হলেন তাঁর সবচেয়ে প্রিয় সন্তান ইসমাইল (আ) কে আল্লাহর নামে কোরবানি করার ঠিক তখনই মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে পুত্র ইসমাইলের পরিবর্তে একটি দুম্বার কোরবানি হয়ে গেল। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা গায়েবী নির্দেশে অশ্রুসিক্ত ব্যাকুল পিতা-পুত্রের নিকট স্বীয় কুদরতের জানান দিলেন। তিনি জানালেন মানুষের শুধু প্রার্থনায় নয় বরঞ্চ নিয়ত এবং উদ্দেশ্য গুনে তিনি ফজিলত দান করেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,  “অবশেষে যখন পিতা-পুত্র উভয়ে আল্লাহর কাছে নিজেদের কে সোপর্দ করলো এরং ইবরাহীম আ. পুত্রকে উপুড় করে শুইয়ে দিলেন (যবেহ করার জন্যে), তখন আমরা তাকে সম্বোধন করে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি সপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছ। আমরা সৎকর্মশীলদের এরূপ প্রতিদানই দিয়ে থাকি। বস্তুত এ এক সুস্পষ্ট কঠিন পরীক্ষা। আর আমরা বিরাট কুরবানী ফিদিয়া স্বরূপ দিয়ে তাকে (ইসমাঈলকে) উদ্ধার করেছি”। { সূরা আস-সাফ্ফাত ১২০-১০৭।}

স্রষ্টার সন্তুষ্টি লাভের আশায় বিশ্বব্যাপী মুসলিমগন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর এই মহিমান্বিত ত্যাগ স্বীকারকে প্রতি বছর জিলহজের ১০-১২ তারিখের মধ্যে পালন করেন তাদের প্রিয় পশু কোরবানির মাধ্যমে। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন কোরবানি করার নিয়মাবলী। পাশাপাশি কোরবানি পরবর্তী রয়েছে কিছু বিধি নিষেধ। আসুন জেনে নেই দিনটিতে আমাদের করনীয়সমূহঃ

  • ইসলামি আইন অনুযায়ী কোরবানি ফরজ হবার জন্য রয়েছে বিভিন্ন শর্ত। সবার উপর কোরবানি ফরজ নয়। তাই কমদামি পশুর তুলনা করে অথবা ‘মুসলিম হয়েও কেন কোরবানি করছেন না’ এইরূপ অনর্থক কথা বলে মানুষের সামর্থ্যের উপহাস করা থেকে দূরে থাকুন। ইহা কোরবানির শিক্ষা নয়।
  • অবশ্যই সামর্থ্য অনুযায়ী কোরবানি আল্লাহর কাছে শ্রেয়। কোরবানির বিধান নাযিল হয়েছেই আপনার উদ্দেশ্য এবং ইচ্ছা পরীক্ষা করার জন্য।আল্লাহর কাছে আপনার অর্থ- বিত্ত পৌঁছাবে না।
  • পরিবার, প্রিয়জনের প্রতি মমতা এবং গরিব-দুঃখীর কষ্ট উপলব্ধি করা কোরবানির অন্যতম শিক্ষা। তাই পশু কোরবানি হবার সাথে সাথেই তিনভাগ করে ফেলুন। নিশ্চিত করুন গোশত কিনতে না পারা অসহায় দুস্থদের ভাগের সঠিক বণ্টন। আপনার কোরবানি গ্রহনযোগ্য হবে না যদি না তা থেকে কোন গরীবের উদরপূর্তি হয়।
  • পশু কোরবানির জন্য দক্ষ কসাই নিয়োগ করুন। পশুর ধমনী পুরোপুরি কাটা যায় সেদিকে যেন লক্ষ্য থাকে। অন্যথায় প্রাণীর তো কষ্ট হবেই আপনার কোরবানিও ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
  • কোরবানির পর সাথে সাথেই চামড়া ছাড়ানো শুরু করবেন না। পশুর দেহ আগে নিথর হতে দিন এবং রক্ত সম্পূর্ণরুপে বের হতে দিন। নয়ত রক্তাক্ত মাংস এবং শিরা থেকে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর পশুর এনজাইম এবং ব্যাকটেরিয়া সহজেই সংক্রমণ ঘটাবেতাবে।
  • পশুর চামড়া বিভিন্ন সল্ট ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে সংরক্ষণ করুন সাথে সাথেই।
  • কোনভাবেই ক্ষুধার্ত পশু কোরবানিযোগ্য নয়।
  • বিচ্ছিন্ন স্থানে কোরবানি দিয়ে পশুর উচ্ছিষ্ট ও বর্জ্য না ফেলে অথবা যত্রতত্র কোরবানি না দিয়ে এক এলাকার সকলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি দিন। উৎকট দুর্গন্ধ করে মানুষের বসবাসের অযোগ্য করবেন না।
  • নিজ উদ্যোগে নিজের পশুর ময়লা পরিষ্কার করে ডিসপজেবল ব্যাগে ভরে ফেলুন। মাংস কাটা শেষ হলে সাথে সাথেই প্রচুর পানি এবং ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করুন। ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পরার জন্য কোনরকমেরই আবর্জনা ফেলে রাখা যাবে না।
  • আপনার আশেপাশে অনেক অমুসলিম মানুষ থাকতে পারেন। কোরবানি তাদের কাছে গ্রহণীয় নাও হতে পারে। ভিন্ন রীতির মানুষের আচার পালনে ভিন্নতা থাকতেই পারে। তাই বলে তাদের অস্বস্তি বাড়ানোর জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকুন। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর শিক্ষা এটা নয়।
  • পশু কোরবানির সময় প্রাণীর মস্তিষ্কে শক ওয়েভ তৈরি হয়, যার ফলে পশু দেহে ক্ষতিকারক এনজাইম এবং মস্তিষ্কে রক্তজমাট বাঁধতে পারে। রান্নার পূর্বে তাই ভালভাবে ধুয়ে এবং রক্ত বের হয়ে যাওয়া পর্যন্ত পর্যাপ্ত সময় দিন।
  • পশুদের হ্রদরোগ থাকতে পারে। যার ফলে সংশ্লিষ্ট এনজাইম মাংসের সাথে মানুষের দেহে প্রবেশ করলে উচ্চরক্তচাপ অথবা স্ট্রোকের ঝুঁকি শতভাগ বাড়বে।
  • অতিরিক্ত গোশত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য প্রানীজ এনজাইম যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে চলুন। হযরত উমর বলেন ‘ মাংশের স্বাদ হতে সাবধান কারন ইহা মদের মত আসক্তির কারন’।      
  • পশুর চামড়া ইতিবাচক কাজে ব্যয় করুন। চামড়া বিক্রির কাজ সন্ধ্যার আগেই শেষ করুন নয়ত তাতে ইস্ট এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশন ছড়াবে।
কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,বলুন! হে মুহাম্মদ! আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সব কিছুই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্যে।’’ { সূরা আল আনআম-১৬২}। সুতরাং আমাদের কোরবানির একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ। পরিবার এবং গরিব দুঃখীর সাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিয়ে দুস্থদের মুখে গোশত তুলে দেয়ার মাধ্যমে ক্ষুধার্তের কষ্ট অনুভব করার মাঝেই রয়েছে ঈদের সার্থকতা। আসুন পরিছন্নভাবে এবং ধর্মীয় মর্যাদায় পালন করি ঈদ-উল-আযহা।

কর্মক্ষেত্রে মাহে রমজান পর্ব-৩

কর্মক্ষেত্রে মাহে রমজান পর্ব-৩
রোজার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা পাশবিকতাকে দমন এবং নৈতিক উৎকর্ষ সাধনের সুন্দর ব্যবস্থা বিদ্যমান। রমজানে তাই এক মাস ব্যাপী আত্মশুদ্ধির যে পরম চর্চার আয়োজন চলে তা বাহ্যিকভাবে পরিলক্ষিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। যেহেতু পেটের দায়ে এবং রুজির যোগানে আধুনিক যুগে আমাদের ঘর থেকে বের হতেই হবে সেহেতু ঈশ্বরের কাছে অন্তরের কুটিলতা, অপবিত্রতা আর অমানবিকতা বর্জনের পরীক্ষা দেবার এটাই উত্তম পন্থা। অসংখ্য লোভ-লালসার ভিড়ে আমাদের মুখ,হাত,নফস,কর্মকাণ্ড এবং মস্তিষ্ককের সহনশীলতা, উদারতা আর নিয়ন্ত্রণ করানোর এটাই প্রায় একমাত্র আধ্যাত্মিক ইবাদত। সামাজিক এবং ব্যক্তিগত কিছু দায়বদ্ধতা আমাদের রমজান মাসে ঈশ্বর সাধনায় আনতে পারে ঐশ্বরিকতা। জেনে নেই মাসে আমাদের করণীয় কিছু কর্তব্য।



  • আপনার রোজদার দুর্বল সহকর্মীর প্রতি বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যবহার করুন। পারতপক্ষে তাঁকে এমন কোন শ্রমসাধ্য কাজে আটকাবেন না যা তাঁর শারীরিক সামর্থ্যের প্রতিকূলে।
  • কেন রোজা রাখেন নিএরকম মূর্খতাপূর্ণ প্রশ্ন রোজা অপালনকারী সহকর্মীকে বার বার করা হতে বিরত থাকুন। একজন মুসলিম বিভিন্ন ব্যক্তিগত সমস্যার কারনে রোজা না রাখতেই পারেন যা আপনার সাথে জনসম্মুখে আলোচনায় তিনি স্বচ্ছন্দ নন। আপানি বার বার একই প্রশ্ন করে তাঁর কর্মক্ষেত্রকে অস্বস্তিদায়ক করে তুলছেন।
  •  
  • রোজা না রেখে থাকলে অবশ্যই আপনার রোজদার সহকর্মীকে সাহায্য করুন। তাঁর সামনে পোশাক-আশাক আর আচার-ব্যবহার সঙ্গতিপূর্ণ করে তাঁকে বোঝান তাঁর ইবাদতের প্রতি আপনার যথেষ্ট সম্মান রয়েছে।
  • বুদ্ধিবৃত্তিক চ্যালেঞ্জিং এবং সকল প্রকার মিটিং আলোচনা ভিত্তিক কাজগুলো সকালেই সেরে ফেলুন। কেননা না খেয়ে থাকার প্রভাব সবচেয়ে বেশি দুপুরের পরেই পরিলক্ষিত হয়। রুটিন মাফিক কাজগুলোতে তাই দুপুরের পর পরেই হাত দিন।
  • আপনি যদি বিদেশী কোম্পানিতে চাকরি করে থাকেন এবং আপনার সহকর্মীরা যদি মুসলিম না হন তাহলে আপনার বিধিনিষেধ সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা পূর্ণ অবগত না থাকতেই পারেন। তাঁদের কোনরূপ কথা বা ব্যবহারে সহসাই নেতিবাচক না হয়ে হাসিমুখে আপনার অপারগতার কথা জানান আপনার ম্যানেজারকে অবশ্যই এই একমাসে আপনার করণীয়, অফিস গমনের সময় সীমা এবং শারীরিক মানসিক বিধিমালা সম্পর্কে আগেই অবহিত করুন। এই মাসে আগে আগে এসে কাজ শুরু করে অফিস আওয়ার শেষ হবার আগেই ছুটি অনুরোধ করার সাথে সাথেই ম্যানেজমেন্টকে পরবর্তী মাসে বাড়তি কাজ শিডিউল করে দিতে বলুন। এতে আপনার ইবাদত আর কাজের প্রতি একাগ্রতা প্রকাশ পাবে।দেখবেন আপনার অমুসলিম সহকর্মীরা রমজান চলাকালীন আপনার প্রতি কতটুকু যত্নবান হইয়ে ওঠেন।
  • অফিসিয়াল লাঞ্চ এবং বিভিন্ন ম্যানেজম্যান্ট মিটিংগুলো খাদ্যমুক্ত রাখতে পারেন আপনার রোজাদার সহকর্মীর সম্মানে। একেবারেই সম্ভব না হলে তাঁর সাথে কথা বলে বিষয়টির ব্যাপারে মৌখিক অনুমতি চাইতে পারেন। তাঁরা আপনার অবস্থান বিবেচনা করবেন এবং এতে করে আপনার সুসম্পর্ক আরও বাড়বে।
  • স্বাস্থ্য কমানোর জন্য রোজা রাখছিএইরূপ অনর্থক বাক্যালাপ অন্যকে শোনানো বর্জন করুন। রমজান কোন ডায়েট করার উপায় নয় বরঞ্চ ইহা কঠোর নিয়মকানুনের মাধ্যমে নিজের পরিশুদ্ধি লাভের পথ। অনেকের জন্য রমজান গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।এই কথা বলার মাধ্যমে আপনি অন্যের ইবাদতকে অজান্তেই পরিহাস করে বসতে পারেন।
  • অনেকেই শারীরিক কারনে কাজ এবং রোজা এক সাথে পালন করতে পারে না। তাঁরা বার্ষিক ছুটিগুলোর আবেদন একসাথে এই মাসের জন্য করতে পারেন।
  • ইফতারের আমন্ত্রণ গ্রহন করুন। এমনকি আপনি বেরোজদার অথবা অমুসলিমই হন না কেন।ইফতারের খাবার গরিবদের মাঝে বিলানো এবং ইফতারের আমন্ত্রণে সকল সম্প্রদায়ের এক সাথে আহার করার সংস্কৃতি হাজার বছরের পুরোন। ভাতৃত্ববোধের অনন্য উদাহরন।


রাসূল(সাঃ)বলেন, যে ব্যক্তি  (রোযা রেখে) মিথ্যা কথা সে অনুযায়ী কাজ করা বর্জন করে না তবে তার শুধু খাদ্য পানীয় বর্জন করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।(সহীহ বুখারী, হাদিস নং ১৮০৪) সুতরাং রমজানের শুরুতেই আমরা যেন নিয়ন্ত্রণ করতে শিখি আমাদের জৈবিক সকল অমানবিক প্রবৃত্তিকে। সামাজিক পরিবেশে আর কর্মক্ষেত্রে মেনে চলি কিছু সাধারণ মার্জিত আচার ব্যবহার।যত্নবান হই একে-অপরের প্রতি, সহানুভূত হই সমাজের সর্বক্ষেত্রে শ্রমজীবীদের আত্মত্যাগে।যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যে পালন করি সিয়াম সাধনার এই মাসটি। উষর আত্মিক পরিত্রাণে নিমগ্ন সকল সহকর্মীকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাসিমুখে সম্ভাষণ জানাই রমজানের প্রথম দিনেইরমজানুল মুবারাক