Showing posts with label একাত্তরের চিঠি. Show all posts
Showing posts with label একাত্তরের চিঠি. Show all posts

একাত্তরের চিঠি পার্ট #২

একাত্তরের চিঠি পার্ট #২
কেমন আসছেন সবাই। আশা রাখি ভালো আছেন। গত ডিসেম্বর মাসে একাত্তরের চিঠি নিয়ে পোষ্ট শুরু করেছিলাম। তাই আবারোও হাজির হয়ে গেলাম। আমরা আপনাদের জন্য একাত্তরের চিঠি নিয়ে ধারাবাহিক পোষ্ট শুরু করেছিলাম। আর তা ই ধারাবাহিকতায় আজ পড়ে নিন   ২য় চিঠি।










একাত্তরের চিঠি পার্ট #১



৫ এপ্রিল, ১৯৭১ সাল
মাগো,
তুমি যখন এ চিঠি পাবে, আমি তখন তমার থেকে অনেক দূরে থাকব। মা, জানি, তুমি আমাকে যেতে দিবে না, তাই তোমাকে না বলে চলে যাচ্ছি। তবে যেদিন মা-বোনের ইজ্জতের প্রতিশোধ এবং এই সোনার বাংলাকে শত্রুমুক্ত করতে পারব সেদিন তোমার ছেলে তোমার কোলে ফিরে আসবে।
দোয়া করবে, মা, তাওমার আশা যেন পূর্ণ হয়।


ইতি
তোমারই
হতভাগা ছেলে


পুনশ্চঃ সেই গাঢ় অন্ধকারে একাকি পথ চলেছি। শরীরের রক্ত মাজে মাজে টগবগিয়ে উঠেছে, আবার মনে ভয় ও জেগে উঠেছে, যদি পাকসেনাদের হাতে ধরা পড়ি, তবে স আশাই শেষ(...)*  যশোর হয়ে নাগদা বর্ডার হয়ে ভারতে প্রবেশ করি। পথে একবার রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ি। তারা শুধু টাকা-পয়সা ও চার-পাচটা হিন্দু যুবতি মেয়েকে নিয়ে আমাদের ছেড়ে দেয়। তখন একবার মনে হয়েছিল, নিজের জীবন দিয়ে মেয়েদের ওদের হাত থেকে রক্ষা করি। কিন্তু পরমূহূর্তে মনে হয়, না, এদের উদ্ধার করতে গেলে প্রানটাই যাবে, তাহলে হাজার মা-বোনের কি হবে?
রাত চারটার দিকে বর্ডার পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করি। বাল্যবন্ধু শ্রী মদনকুমার ব্যানার্জি ইত্না কলোনি, শিবমন্দির, বারাসাত, ২৪ পরগনা- এই ঠিকানায় উঠালাম। এখানে এক সপ্তাহ থেকে ওই বন্ধুর বড় ভাই শরত চন্দ্র ব্যানার্জি আমাকে বসিরহাট মহকুমা ৮ নম্বর সেক্টর মেজর ডালিমের তত্ত্বাবধানে আমাকে মুক্তিযুদ্ধা ট্রেনিংয়ে ভর্তি করে দেন। সেখানে পরিচয় হয় ব।রেজিমেন্টের আবুল ভাইয়ের সঙ্গে। ট্রেনিং ক্যাম্পে এক সপ্তাহ থাকার পর কর্ণেল ওসমান গণির নির্দেশে আমাদের উচ্চ ট্রেনিং (...)*




* চিঠি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারনে লেখা অসম্পূন্য।



চিঠি লেখকঃ মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম মাহাবুবুর রহমান। তিনি চিঠিটি লিখেছিলেন ৮ নম্বর সেক্টর হেডকোয়ার্টার, ট্রেনিং সেকশন, বসিরহাট সাব ডিভিশন, ২৪ পরগনা ভারত থেকে।
তাঁর বর্তমান ঠিকানাঃ বাড়ি ৭ (দোতলা), সড়ক ১৮, ব্লক জি/১, সেকশন ২, মিরপুর, ঢাকা।
চিঠি প্রাপকঃ মা রাহেলা বেগেম রঙা, আখলিপাড়া, নদিয়ার চাদ্ঘাট, বোয়ালমারী, ফরিদপুর।
চিঠিটি পাঠিয়েছেনঃ লেখক নিজেই।

একাত্তরের চিঠি

 একাত্তরের চিঠি
কেমন আছেন সবাই?? আশা রাখি ভালো আছেন।  এই বিজয়ের মাসে আপনাদের জন্য এবারে নিয়ে আশালাম একটি ভিন্নধর্মি বিষয় নিয়ে। সেটা হল একাত্তরের চিঠি।
আমরা দির্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে পাকিস্থানের হাত থেকে ছিনিয়ে এনেছি আমাদের এ দেশকে। আমরা অর্জন করলাম লাখো শহিদের বিনিময়ে একটি মানচিত্র।



এখন কতজন জানেন বা  সেই নয় মাসের যুদ্ধ কতটা ভয়ংকর ছিলো। যারা যুদ্ধ করেছেন তাদের আবেগ কি ছিলো। তারা কিশের টানে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। কতটা কষ্ট সয্য করে দেশ স্বাধীন করেছেন সেটা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব না। কারন তা ছিলো আমাদের কল্পনাআতিত। আর সে জন্যই নিয়ে আসলাম একাত্তরের চিঠি। যে চিঠিগুলো পড়লে আপনি আমান্য হলেও অনুমান করতে পারবেন কত দুর্বিশ্যহ ছিলো সেই নয় মাস।

কারা এই চিঠি গুলো লিখেছে
এই চিটিগুলো যুদ্ধ কালিন সময়ে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান তার মায়ের কাছে, স্ত্রী তার মুক্তিযোদ্ধা স্বামীর কাছে, মুক্তিযোদ্ধা পিতা তার সন্তানের কাছে, ভাই তার বোনের কাছে। এই মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ ফিরে এসেছে তাদের পরিবারের কাছে। আবার কেউ শহীদ হয়েছে এই দেশ রক্ষা করতে গিয়ে।



চিঠিগুলো কী ভাবে সংগ্রহ করা হয়?
গ্রামিনফোন এবং প্রথম আলোর উদ্যোগে সারা দেশ থেকে এই চিঠি গুলো সংগ্রহ করা হয়।





২৯শে মার্চ/ রাজশাহী '৭১


আম্মা
সালাম নেবেন।
আমি ভালো আছি এবং নিরাপদেই আছি। দুশ্চিন্তা করবেন না। আব্বাকেও বলবেন। দুশ্চিন্তা মনঃকষ্টের কারণ ছাড়া আর কোন কাজে আসে না। এখানে গতকাল ও পরশু ঝদতগমা বনাম ওীসব-র মধ্যে সাঙ্গাতিক সংঘর্ষ হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত আমরা জিততে পারিনি।
রাজশাহী শহর ছেড়ে লোকজন সব পালাচ্ছে। শহর একদম খালি। Military কামান ব্যবহার করছে। ২৫০-র মত Police মারা গিয়েছে। ৪ জন Army মারা গিয়েছে। মাত্র।
রাজশাহীর পরিস্থিতি এখন Army-র আয়ত্তাধীন রয়েছে। হাদী দুলাভাই ভাল আছেন। চিন্তার কারন নেই। দুলি আপার খবর বোধহয় ভালো। অন্য কোথায় যেন আছেন। আমি যাইনি সেখানে।
পুস্প আপা সমানে কাঁদাকাটি করে চলেছেন। ঢাকার ভাবনায়। ক'দিন আগে গিয়েছিলাম। ধামকুড়িতে বোধহয় উনার মা আছেন। সম্বব হলে খবর পৌছে দেবেন। আমার জন্য ব্যস্ত হবেন না। যেভাবে সাধারন মানুষ্কে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে আমাদের বেছে থাকাটাই লজ্জার। আপনাদের দোয়ার যোরে হয়তো মরব না। কিন্তু মরলে গৌরবের মৃত্যুই হতো। ঘরে শুয়ে শুয়ে মরার মানে হয় কি?
এবার জিতলে যেমন করে হোক একবার নওগাঁ যেতাম। কিন্তু জিততেই পারলাম না। হেরে বাড়ি যাওয়া তো পালিয়ে যাওয়া। পালাতে বড্ড অপমান বোধহয়। হয়তো তবু পালাতেই হবে। আব্বাকে সালাম। দুলুরা যেন অকারণ কোন risk না নেয়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বললাম কথাটা তাতে শুধু শক্তি ক্ষয়ই হবে।
দোয়া করবেন।
ইতি
বাবুল, ২৯/৩

চিঠি লেখকঃ শহিদ কাজী নুরুন্নবী। ১৯৭১ সালে রাজশাহী মেদিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন এবং কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিব বাহিনির রাজসাহী বিভাগের প্রধান ছিলেন। ১ অক্টোবর ১৯৭১ নুরুন্নবীকে পাকিস্তানি বাহিনি আটক করে শহীদ জোহা হলে নিয়ে যায়। তাঁর আর খোজ পাওয়া যায়নি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের একটি হোস্টেল তাঁর নামে রয়েছে।
চিঠি প্রাপকঃ মা নুরুস সাবাহ রোকেয়া। শহীদের বাবার নাম, কাজী সাখাওয়াত হোসেন। ঠিকানাঃ লতা বিতান কাজীপাড়া, নওগাঁ।
চিঠিটি পাঠিয়েছেনঃ ডা. কিউ এস ইসলাম, ১৮ শিন্তিনগর ঢাকা।