কর্মক্ষেত্রে মাহে রমজান পর্ব-২

মনে রাখতে হবে রমজান মাস আত্মিকশুদ্ধি অর্জনের নিমিত্তে একটি উত্তম রহমত। রোজা একটি ধৈর্যের প্রশিক্ষণ ব্যক্তিজীবন গঠনে, সমাজের উন্নয়নে, মানবতার সেবায়, দ্বীনি দায়িত্ব      পালনে পাহাড়সম বাধা মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন অপরিসীম ধৈর্য, সেই জন্য রাসূল (সা) মাসকে ধৈর্যের মাস হিসেবে অভিহিত করেছেন। হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণিত হয়, রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘‘কেবল আহারাদি থেকে বিরত থাকার নাম রোজা নয়।অশ্লীল কথাবর্তা অশালীন আলোচনা থেকে দূরে থাকাই আসল রোজা।অতএব হে রোজাদার! যদি কেউ তোমাকে গালি দেয় বা তোমার সাথে অভদ্রতা করে তাহলে তাকে বলো:আমি রোজাদার।’’(ইবনে খোযায়মা ইবনে হিক্বাম)



উদ্বুদ্ধ অবস্থা যেন কখনই রোজাদারের ঈশ্বরলাভের পবিত্র নিয়ত বাঁধাপ্রাপ্ত না করতে পারে তার জন্য রোজা পালনকারী এবং অপালনকারী উভয়েই মেনে চলতে পারেন কিছু ব্যক্তিগত এবং সামাজিক বিধি-নিষেধ। এভারজবস্ বাংলাদেশ নিন্মে রমজান চলাকালীন বিশেষত কর্মক্ষেত্রে এবং সামাজিক অঙ্গনে আমাদের করণীয়সমূহ শেয়ার করল :

  • কর্মক্ষেত্রে পৌঁছান সময়ের আগেই। এমনকি সাধারনত রমজান মাসে অফিস শুরু এবং শেষ হবার সময় আগালেও আপনি ১০ মিনিট এগিয়ে থাকুন।
  • রোজারেখে সারাদিন কাজে ফোকাসড থাকা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।দিনের কাজগুলোর একটা আনুমানিক ছক করে ফেলুন প্রয়োজনীয় সময় বেঁধে। এতে দিনব্যাপী রক্তে শর্করা কম থাকার ফলে কর্মশক্তি কম থাকলেও আপনার মস্তিষ্ক সহজেই ফোকাস থাকবে করণীয় কাজগুলো নিয়ে।
  • লাঞ্চ বিরতি অনর্থক খোশ গল্পে না কাটিয়ে কাজ করতে থাকুন। সম্ভব না হলে বিশ্রাম নিন অথবা ইবাদত করুন।এতে পুনরায় শরীররে বল পাবেন এবং সময়ের আগেই কাজ শেষ করতে পারবেন।
  • রোজা রেখে যত কম কথা বলবেন তত বেশি শক্তির সঞ্চয় থাকবে। যেহেতু জিহ্বা এবং যৌনতার উপর নিয়ন্ত্রন রাখাই সিয়াম ইবাদতের অংশ সেহেতু অনর্থক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকুন। কম কথা বলে নিজেকে কর্মক্ষম রাখুন।
  • রাতের শিফটের ডিউটি থাকলে আপনার বসের সাথে কথা বলে বদলে নিন।কোনভাবেই সম্ভব না হলে দিনে পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রাম নিয়ে নিন।কোনভাবেই ইফতারের পর ঘুমিয়ে সেহরিতে খেয়ে সারা দিন রোজা রাখার চেষ্টা করা উচিত নয়। এতে করে পানি পানের দৈনিক গড়পড়তা মারাত্নকভাবে কমে যেতে পারে।
  • রোজা রেখে কাজ করার সময় একটু ধৈর্য ধারণ করা আবশ্যকীয়। অফিস সহকর্মীর কোনরূপ ব্যবহার যদি আপনাকে বিরক্ত করে তাহলে শান্ত মাথায় তার নিয়ন্ত্রণ নিন। তাকে জানিয়ে দিন আপনি রোজা রেখেছেন এবং তর্ক করতে চাচ্ছেন না।
  • কাজের সময় ঘুম ঘুম ভাব হতে পারে। তক্ষনাৎ মিনিটের একটি বিরতি নিন। বসে থাকলে চেয়ারে হেলান দিন,সুযোগ থাকলে আধশোয়া হয়ে মিনিট খানিক চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিতে পারেন। এই খানিক বিরতিতে গল্পগুজবে মশগুল হয়ে পড়লে মনে রাখবেন পরে কাজের মাঝে আপনার আবার ঘুম পাবে।
  • বারতি কাজের চাপে অথবা বাড়ি দূরে হলে ইফতারের সময় যদি কোন সহকর্মী সাথে থাকেন তবে তার সাথে ইফতারের প্রস্তুতি নিন। আন্তরিকতা বৃদ্ধি রমজানের অন্যতম শিক্ষা।
  • আপনি যদি রোজা না রেখে থাকেন তাহলে আপনার ক্লান্ত সহকর্মীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন। তাঁর সামনে কোন খাবারের সুঘ্রান, অসামাজিক কার্যকলাপ, অনর্থক উচ্চ শব্দ, পরনিন্দা, অনৈতিকতা ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। অবশ্যই সবকিছু করার ব্যক্তিস্বাধীনতা আপনার রয়েছে কিন্তু মানবিকতা রক্ষা করা আপনার সামাজিক দায়িত্ব।
·            
(চলবে)



শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট