মুমিনুল হক বাংলাদেশের একজন তারকা ক্রিকেটার। বেশ অল্প সময়ের মধ্যে তৈরি করে ফেলেছেন নিজের ভক্তকূল। আর তাই মুমিনুল সম্পর্কে ভিক্তদের জানার আগ্রহ কম না। তাই জেনে নিন মুমিনুল সম্পর্কে আবু জাফর সিদ্দিক এর লেখা থেকে।
১৯৯১ সাল,
৯নং মাস সেপ্টেম্বরের ২৯ তারিখ! এত গুলো
‘নয়’ এর মাঝে পৃথিবীর
বৃহত্তম সুমদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারে
জন্ম নিল এক ‘হ্যা’! একটি ফুটফুটে
শিশু। বাবা মা হয়তো চেয়েছিলেন তাদের
আদরের সন্তানটি পৃথিবী ব্যাপি তার সৌরভ
ছড়াক! তাই নামটাও ঠিক করা হলো সৌরভ। ভাল
নাম মুমিনুল হক। ৬ষ্ট শ্রেণী
পর্যন্ত জন্মস্থানেই পড়ালেখা করার পর
২০০৪ সালের জুলাই মাসে সৌরভ ভর্তি হন
সাভার জিরানীতে অবস্থিত বিকেএসপির
(বাংলাদেশ ক্রিড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান)
ক্রিকেট বিভাগে।
সমুদ্র পাড়ে বেড়ে উঠা এই ছোট খাট আকৃতির
ছেলেটি যে একদিন বিশ্বক্রিকেটেই
নিজের সৌরভ ছড়িয়ে এ দেশের মুখ উজ্জ্বল
করবে সেটাই বা কে ভেবেছিল? ৫ ফিট
সাড়ে তিন ইঞ্চি একজন ক্রিকেটারের ব্যাটে
যে এতটা ধার থাকতে পারে সেটা এর
আগে ক্রিকেট বিশ্বের খুব একটা বেশি
দেখার সৌভাগ্য হয়নি। ক্রিকেটের গ্রামার
মেনে ব্যাট করা এই ক্লাসিকাল
ব্যাটসম্যানের ব্যাটে রান বন্যা যেন লেগেই
আছে।
মাত্র বছর দুয়েক আগে (৮ মার্চ, ২০১৩)
শ্রীলংকার বিপক্ষে অভিষেক হওয়ার
পর এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এখন পর্যন্ত
১৪ টি টেস্টে ২৭ বার ব্যাট করার
সুযোগ পেয়েছেন। খেলছেন ৯ টি অর্ধশতক ও ৪
টি অনবদ্য শত রানের ইনিংস। ৬০ গড়ে
১৩৮০ রান করা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান
বাউন্ডারির বাইরে বল আছড়ে ফেলছেন ১৬১
বার। ওভার বাউন্ডারি একটি। আরে তাতেই
চাপা পড়েছে বিশ্বের নাম করা সব
ব্যাটিং লেজেন্ডদের কীর্তি। টানা ১১
ম্যাচে পঞ্চাশোর্ধ রান করা এই টাইগার
ভেঙেছেন শচিন টেন্ডুলকার ও জন এডরিখ এর
রেকর্ড, ভাগ বসিয়েছেন বিরেন্দর
শেবাগ,
গৌতম গম্ভীর ও ভিভ রিচার্ডসের মত
ব্যাটসম্যানদের রেকর্ডে। আর ঘাড়ে
নিশ্বাস ফেলছেন টানা ১২ ম্যাচে
পঞ্চাশোর্ধ রান করা প্রোটিয়াস কাপ্তান এবি
ডি ভিলিয়ার্সের। ১০ জুন থেকে ফতুল্লায়
শুরু হতে যাওয়া ভারত সিরিজের একমাত্র
টেস্টে সাম্প্রতিক সময়ের সেরা এই ব্যাটসম্যানকে
ছুঁয়ে আরেকটি মাইল ফলকের শীর্ষে উঠে আসবেন বাংলার ‘ছোট্ট ব্রাডম্যান’
এমনই প্রত্যাশা ভক্তদের।
“টেস্ট ক্রিকেটে টানা ১০এর অধিক ম্যাচে ৫০ কিংবা তারও বেশি রান”
এ ছাড়া টানা ৮ টেস্টে এই কীর্তি গড়ার
রেকর্ড রয়েছে ১০জন ব্যাটসম্যানের।
যাদের মধ্যে স্যার গ্যারি সোবার্স, ভারতের ভিভিএস
লক্ষ্মণ, ইংল্যান্ডের
ওয়ালি হ্যামন্ড, গ্রাহাম গুচ, এন্ড্রু ফ্লিন্টফদের
মত ব্যাটসম্যানরাও রয়েছেন। টানা ৭ টেস্টে এই কীর্তি গড়েছিলেন স্যার ডন
ব্র্যাডম্যানও।
মুমিনুল হকের ৪ শতকের বিস্তারিতঃ
সাগরের উত্তাল ঢেউ দেখে বেড়ে উঠা ‘সৌরভ’ স্বভাবে শান্ত সুলভ
হলেও তার ব্যাটিংয়ে যেন সেই চেনা উত্তাল স্রোত, নিখুঁত সব ক্রিকেটীয়
শট আর ধারাবাহিক রানে দিন দিন নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এই সৌরভ ক্রিকেটে
আর কত সৌরভ ছড়াবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত পাড়ের
ছেলেটি টেস্ট ক্রিকেটে সর্বাধিক রানের মালিকদের একজন হয়ে উঠুক সেই প্রার্থনা
এদেশের ১৬ কোটি ক্রিকেট পাগল মানুষের।
সাগরের বুক থেকে জন্ম নেয়া বিরতিহীন
ঢেউয়ের মত তার ব্যাট থেকে আসুক
বিমোহিত করা সব ইনিংস আর রেকর্ড বইয়ে
লিপিবদ্ধ হোক সৌরভময় সব কীর্তি। রচিত
হোক একটি নামকরণের স্বার্থকতার গল্প!
সূত্রঃ টাইগার ক্রিকেট