হাসুন এবার প্রাণ খুলে

# অনেকে হাসেন খুব সুন্দর করে। হাসেন প্রাণ খুলেও। কিন্তু তার নিঃশ্বাসে আবার অনেকের প্রাণ যায় যায়, মানে দুর্গন্ধ বের হয়। লক্ষ্য করে দেখবেন, ব্যক্তি জীবনে আপনি এ রকম মানুষের মুখোমুখি নিশ্চয়ই হয়েছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে না সহ্য করা যায়, না লোকটিকে বলা যায়।  কিন্তু আপনার হাসিতে কেউ এভাবে আক্রান্ত হচ্ছে কিনা তা কি একবার ভেবে দেখেছেন? ভাবছেন তা কি করে হয়! আমার নিঃশ্বাসে বাজে গন্ধ থাকলে তা কি আমি বুঝতে পারতাম না? অবাক হলেও ব্যাপারটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সত্যি। যার নিঃশ্বাসে এ রকম গন্ধ বের হয় তিনি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বুঝতে পারেন না। এদিকে তার মুখের এই গন্ধ বুঝতে পেরেও লজ্জায় বলতে পারে না তার বন্ধুরা, অফিসের কলিগ বা পরিচিতজনরা। ফলে সে যখন কথা বলে অন্যরা তখন পড়ে নরক যন্ত্রণায়। মুখের এই বাজে গন্ধ হ্যালোটসিস নামে পরিচিত। খুব কমন অসুখ এটি। চিকিৎসাও বেশির ভাগ ড়্গেত্রেই খুব সহজ। সাধারণত তাদেরই মুখে গন্ধ বেশি হয় যারা নিয়মিত সকাল ও রাতে দাত ব্রাশ করেন না, যাদের বয়স বেড়ে গেছে, উঠতি বয়সী কিশোর, যারা আকাবাকা দাত ঠিক করতে ব্রেস পড়েন, পান বা সিগারেট খান, দাতের মাঢ়ি দিয়ে রক্ত পড়ে, দাতের মাঢ়িতে পাথরের মতো জমে কালো কালো হয়ে গেছে, যাদের মুখে দাতের ভাঙা অংশ রয়ে গেছে দীর্ঘদিন, কিছু ওষুধের (কিছু ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট, অ্যান্টি-হিস্টামিন, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার, হার্টের কিছু ওষুধ ইত্যাদি) পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে, ডায়াবেটিস, ইনফেকশন হওয়া দাত ও দাতের মাঢ়ি, কিছু খাবার (পেয়াজ, রসুন, কফি) ইত্যাদি।
 কিন্তু কেন হয় দুর্গন্ধ? গবেষকরা দেখেছেন, দুর্গন্ধ হওয়ার পেছনে অনেক ব্যাকটেরিয়াও দায়ী। এসব ব্যাকটেরিয়া সম্মিলিতভাবে পচা গন্ধ তৈরি করে। তবে মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার বেশির ভাগ কারণই দূর করা সম্ভব এবং তা বেশ সহজেই। আর সে কারণে প্রথমে যাওয়া দরকার একজন ডেন্টিস্টের কাছে। তিনি মুখ ও দাতের অবস্থা পরীক্ষ করে দেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। যেমন, দাতের মাঢ়িতে পাথরের মতো থাকলে বা মাড়িতে ইনফেকশন হয়ে থাকলে স্কেলিং করতে পারেন, দাতের ভাঙা অংশ থাকলে সেটি তুলে দেবেন, দাতের গোড়া ফুলে গেলে দাতটি রুট কানাল ট্রিটমেন্ট করে রাখবেন। এভাবে রোগ বুঝে চিকিৎসা দেবেন তিনি। মনে রাখবেন প্রাথমিক অবস্থাতে চিকিৎসা না করলে এই সাধারণ অসুখ থেকে ধীরে ধীরে আপনার মূল্যবান দাত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। তবে কিছু কিছু গন্ধের কারণ ডেন্টাল অরিজিন নাও হতে পারে। সে বিষয়টি তিনি পরীক্ষ করে আপনাকে জানিয়ে দেবেন। তো এতোক্ষণ বলা হলো কি কারণে মুখে দুর্গন্ধ হয় এবং তার সম্ভাব্য সমাধান কি হতে পারে সে বিষয়ে। এবার আপনার পালা-   ১) নিজের মুখে দুর্গন্ধ হচ্ছে কি-না তা পরীক্ষ করে দেখুন এবং ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে যথাযথ সমাধান নিন।  ২) বন্ধু, কলিগ বা সঙ্গীর মুখে দুর্গন্ধ থাকলে তাকে জানিয়ে দিন। এতে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। হয়তো সে জানেই না। আর যখন আপনি বিষয়টা জানিয়ে দেবেন তখন তার উপকারও হবে, আপনার উপকার তো বটেই।  ������������������������� লেখকঃ  ডা· মুজাহিদুল ইসলাম দৈনিক যায়যায়দিন, নেভম্বর ২০০৭ এ প্রকাশিত

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট